সুলতান-উল-হিন্দ, খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী



সুলতান-উল-হিন্দ,
খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী
(উর্দু/معین الدین چشتی)
(ফার্সি: چشتی,উর্দু: چشتی - Čištī) (আরবি: ششتى - চিশতী)


¤Mim Tv-মীম টিভি¤'s photo. 










হযরত খাজা গরিব নেওয়াজ হলেন চিশতীয় ধারার ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত সুফি সাধক। তিনি ১১৪১ সালে জন্মগ্রহন করেন ও ১২৩৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি গরিবে নেওয়াজ (غریب نواز) নামেও পরিচিত। মঈনুদ্দিন চিশতীই উপমহাদেশে প্রথম এই ধারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত করেন। তিনি ভারতে চিশতী ধারার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক ধারা বা সিলসিলা এমনভাবে পরিচিত করেন পরবর্তীতে তার অনুসারীরা যেমন, বখতিয়ার কাকী, বাবা ফরিদ, নাজিমদ্দিন আউলিয়াসহ (প্রত্যেকে ক্রমানুযায়ী পূর্ববর্তীজনের শিষ্য) আরো অনেকে ভারতের ইতিহাসে সুফি ধারা এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।


খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী বোখারা থেকে নিশাপুরে আসেন। সেখানে চিস্তিয়া তরীকার অপর প্রসিদ্ধ ছুফি সাধক খাজা উসমান হারুনীর নিকট মুরীদ হন/শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তার সেবায় ২০ বছর একাগ্রভাবে নিয়োজিত ছিলেন। পরে উসমান হারুনী তাকে খেলাফত বা ছুফি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেন।
বেলায়তের উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন আল্লাহর পূণ্যাত্মা বান্দাগণ আউলিয়া এ কেরাম হিসেবে স্বীকৃত। পাক ভারত উপমহাদেশের ইসলাম প্রচারে যার অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে তিনি হলেন সুলতানুল হিন্দ আতায়ে রাসুল গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ)।

 খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) ৫৩৭ হিজরীতে মধ্য এশিয়ায় খোরাসানের অন্তর্গত সানজার নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ খাজা গিয়াস উদ্দীন, মাতার নাম সৈয়দা উম্মুল ওয়ারা শাহেনুর। পিতৃকূল ও মাতৃকূল উভয় দিক থেকে তিনি আল-হাসানী ওয়াল হোসাইনী বংশধরায় সম্পৃক্ততার কারণে আওলাদে রাসুলের অন্তর্ভূক্ত।
হুজুর গরীবে নেওয়াজ পিতার সান্নিধ্যে প্রাথমিক দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করেন। ৯ বছর বয়সে তরজমাসহ পবিত্র কুরআন শরীফ মুখস্থ করেন। অতঃপর ১৩ বছর পর্যন্ত পিতার সার্বিক তত্ত্বাবধানে কুরআন, হাদিস, ফিকহ্, উসুল, তাফসীর, আরবী সাহিত্য ব্যাকরণ, মানতিক, হিকমত দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে গভীর বুৎপত্তি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি প্রখ্যাত হাদিস বেত্তা ইমামুল হারামাইন হযরত আবুল মা’আলী (রহঃ) এর নিকট শরীয়তের বিভিন্ন সুক্ষাতিসুক্ষè বিষয়ে পান্ডিত্য লাভ করেন। সমরকন্দের প্রখ্যাত আলেম হযরত শরফুদ্দীন ও বোখারার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত হুসামুদ্দীন (রহঃ) এর নিকট দীর্ঘ পাঁচ বছর অধ্যয়ন করে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার কৃতিত্বপূর্ণ পূর্ণতা অর্জন করেন।

 হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) বোখারা থেকে নিশাপুরে আসেন। সেখানে যুগশ্রেষ্ঠ ওলী হযরত ওসমান হারুনী (রহঃ) এর নিকট মুরীদ হন এবং মুর্শীদের খেদমতে ২০ বছর অতিবাহিত করেন। ওলীয়ে কামেল খাজা ওসমান হারুনী (রহঃ) তার শিষ্যের মধ্যে বেলায়েতের ঝলক দেখতে পেয়ে খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) কে খিলাফত প্রদান করেন। খাজায়ে খাজেগান আপন পীর মুর্শিদের অনুমতিক্রমে জ্ঞানী, গুণী, পন্ডিত, দার্শনিকসহ অসংখ্য ওলীর সাথে সাক্ষাত করেন। খাজা বাবা বাগদাদ শরীফে গাউছুল আজম বড়পীর হযরত আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) এর সাহচর্যে ৫৭ দিন অবস্থান করেন। এ সময় গাউসে পাক খাজা বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ইরাকের দায়িত্ব শায়েক শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীকে আর হিন্দুস্থানের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হলো। একই সুসংবাদ খাজা বাবার নিজ পীর মুর্শিদ খাজা ওসমান হারুনীর সাথে মদীনা শরীফে (অবস্থানকালে) রওছায়ে আকদাস জিয়ারতকালে নবী করিম (সাঃ) এর পক্ষ থেকে পেয়েছিলেন।

খাজা গরীবে নেওয়াজ নবীজির নির্দেশেই সুদূর আরব হতে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে প্রথমে লাহোর পরে দিল্লী হয়ে আজমিরে শুভাগমন করেন। ভারতবর্ষে চলছিল তখন অত্যাচারী বিধর্মী শাসকদের কুশাসন। তিনি ভারতে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেন। তার হেদায়েতে দলে দলে লোক ইসলাম গ্রহণ করেন। ফলে সেখানকার বিধর্মী রাজারা স্বীয় রাজ্য হারানোর ভয়ে খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী ও তার অনুসারীদের উপর নানারকম অত্যাচার করতে চেষ্টা করে কিন্তু খাজা সাহেবের বেলায়েতের কাছে তাদের কোন কৌশলই ফলপ্রসূ হয়নি। বরং খাজা বাবার অনুসারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই থাকে। তিনি আধ্যাত্মিক ক্ষমতাবলে অতি অল্প সময়ে এতদঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেছেন সফলভাবে। তার নূরাণী চেহারা, রূহানী তাওয়াজ্জু এবং অলৌকিক ক্ষমতা দেখে অসংখ্য মানুষ ঈমানী সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন।

গরিবে নেওয়াজ উপাধি লাভ
একবার বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানী রা: খাজা
বাবাকে বললেন " হে খাজা
,আল্লাহপাক বলেছেন যে ব্যাক্তি
কালকে সকাল বেলা আমার পিছনে
ফজরের নামাজ পড়বে সে বিনা হিসাবে
জান্নাতবাসি হবে, তাই তোমাকে আমি
এই সু-সংবাদ দিলাম , তুমি সকাল সকাল
কাউকে না বলে আমার পিছনে নামাজে
দাড়িয়ে যেয়েও , তবে সাবধান তুমি
যদি এই কথা আর কাউকে বলো তাহলে
তুমি নিজেই জাহান্নামি হয়ে যাবা ।
খাজা বাবা নিজের কথা চিন্তা না
করে বাগদাদের সকল গ্রামে গ্রামে
গিয়ে মুসলমান ভাইদেরকে এই সুবর্ণ
সুযোগ জানিয়ে দিলেন। ফলে বড় পীর
যখন ফজরের নামাজে শেষ সালাম
ফিরালেন তখন দেখতে পেলেন তার
পিছনে লক্ষ লক্ষ মানুষ কিন্তু খাজা
বাবা নাই। তখন বড় পীর খাজা বাবাকে
ডেকে এনে বললেন " হে খাজা তুমি তো
জাহান্নামি হয়ে গেলে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ
করে, তুমি কেন এই কাজ করলা তুমি কি
জাহান্নাম কে একটুও ভয় করো না "???
উত্তরে খাজা বাবা বললেন " হুজুর
আমার নবীর লক্ষ উম্মত যদি আমার
উসিলায় জান্নাতে যেতে পারে তাহলে
আমি খাজা একা হাশি মুখে জাহান্নামে
যেতে প্রস্তুত" খাজা বাবার ভক্তের এত
মোহাব্বত দেখে চোখের পানি ছেড়ে
দিয়ে সাথে সাথে আল্লাহর দরবারে
মুনাজাত করলেন " ইয়া বারে ইলাহি
আপনি খাজাকে ওয়াদা ভঙ্গ করার
অপরাধ কে ক্ষমা করে দিন, আর সেই
সাথে বিশ্বের ঘরে ঘরে খাজার শান
মান আরও বুলন্দ করে দিন " আল্লাহপাক
সাথে সাথে তা কবুল ও মঞ্জুর করে নেন
এবং খাজা বাবা প্রতি খুশি হয়ে তার
মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দেন"
সেইদিন খাজা বাবার উসিলায়
বাগদাদের লক্ষ লক্ষ মুসলমান বিনা
হিসাবে জান্নাতবাসি হয়ে গিয়েছিল।
খাজা বাবার এই মহান ত্যাগ দেখে বড়
পীর তাকে গরীবের বন্ধু " গরিবে
নেওয়াজ " উপাধিতে ভূষিত করেন। তখন
থেকে খাজা বাবার নাম হয়ে যায়
গরিবে নেওয়াজ খাজা মঈন উদ্দিন
চিশতী ।

হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) ৬৩৩ হিজরীর ৫ রজব দিবাগত রাত অর্থাৎ ৬ রজব সুবহে সাদেকের সময় ইন্তেকাল করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। গরীবে নেওয়াজের বড় সাহেবজাদা হযরত খাজা ফখরুদ্দীন চিশতী (রহঃ) তার নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার খাকী (রহঃ) কে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পন করে সিলসিলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন। প্রতিবছর ১লা রজব হতে ৬ রজব পর্যন্ত আজমির শরীফে খাজা বাবার মাজারে অনুষ্ঠিত হয় ওরস মোবারক।

to download islamic pictures click here 

To Earn click this

Comments