“নবিজীর গোলাম” বলা যাবে কি ?




নবিজীর গোলামবলা যাবে কি এবং এতে কোন প্রকার শিরকের সম্ভাবনা আছে কিনা!!
আবার অনেক সময়ে দেখা যায় যে, রাহমাতুল্লীল আলামীন নবীজি () -এঁর গোলাম বললে কেউ কেউ তাতে কটাক্ষ করেআজকে ইনশাআল্লাহ বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো:


গোলাম ( غلام ) শব্দের আরবী প্রতিশব্দ হল, خادم (সেবক), عامل (কর্মচারী) প্রভৃতি অতএব রাসূলের গোলাম বা পীরের গোলাম বা খাদেম, কর্মচারী, সেবক বলাতে কোন আপত্তি নেইযেমন,মুসলিম শরীফের ২য় খন্ডের كتاب الالفاظ من الادب - বর্ণিত হয়েছে যে-
لايقولن احدكم عبدي وامتي كلكم عبيد الله وكل نساءكم اماء الله ولكن ليقل غلامي وجاريتي
অর্থাৎ, নবীজী () ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ عبدي (আঁমার বান্দাহ) বলোনা।তোমরা সবাই আল্লাহ বান্দাহ এবং তোমাদের সকল মহিলারা আল্লাহ বান্দী।কিন্তু আঁমার গোলাম আঁমার চাকরানী বলতে পার।
(মুসলিম শরীফ)

আর কোন সহীহ মুসলমান যখন নিজেকে নবীর বা পীরের عبد (বান্দাহ) বা গোলাম বলে, নিশ্চয় সে কখনো এটা মনে করে না যে, নবীজি বা হক্কানী পীর ইবাদাতের মালিক বা আল্লাহ হয়ে গেছেনগোলাম অর্থে আব্দ এর ব্যবহারের বৈধতার ব্যাপারে স্বয়ং কুরআন শরীফেই এসেছে আল্লাহ তাআলা বলেন-
قل ياعبادي الذين اسرفوا علي انفسهم لاتقنطوا من رحمة الله
অর্থাৎ, হে নবী!আঁপনি তাদেরকে সম্বোধন করুন,হে আঁমার বান্দাহগণ, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ,আল্লাহ অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না
আয়াতেقل ياعبادي (হে আঁমার বান্দাগণ) এর দুটি অর্থ প্রকাশ পায়
*এক,আল্লাহ বলেন- ওহে আঁমার বান্দাহগণ;
*দুই,হুযুর পাক কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে,হে নবী আঁপনি বলুন,হে আঁমার (অর্থাৎ,আঁপনার) বান্দাহগণ।এ দ্বিতীয় অর্থে রাসূলুল্লাহ বান্দাহ বুঝানো হয়েছে, অর্থাৎ নবীজীর গোলাম এবং উম্মত
✌অনেক বুযুর্গানে দ্বীন দ্বিতীয় অর্থটি গ্রহণ করেছেন। আল্লামা রুমী মসনবী শরীফে বলেছেন
بندہ خود خواند احمد در رشاد * جملہ عالم را بخوان قل یا عباد
অর্থাৎ, সমগ্র জগতবাসীকে হুযুর স্বীয় বান্দাহ বলেছেন। কুরআন শরীফে দেখুন قل ياعبادي বলা হয়েছে
✌ইযালাতুল খফা গ্রন্থে শাহ ওলী উল্লাহ সাহেব রাহিমাহুল্লাহ আর রিয়াযুন নফরা ইত্যাদি কিতাবের উদৃতি দিয়ে বলেছেন যে, হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে গিয়ে বলেছিলেন-
قد كنت مع رسول الله صلي الله عليه وسلم فكنت عبده وخادمه
অর্থাৎ,আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর সাথে ছিলাম। তখন আমি তাঁর বান্দাহ খাদেম ছিলাম
✌অতএব,প্রমাণিত হল যে, عبد (বান্দাহ) শব্দটি গোলাম অর্থে আল্লাহকে ছাড়াও ব্যবহার করা যায়
আল্লাহ পাক সুরা তাহরীমের নং আয়াতে সুস্পষ্টভাবেমাওলাশব্দটি নিজেই অন্যদের জন্য ব্যবহার করেছেনযেমন,আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন
فَاِنَّ اللهُ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيْلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمَلَا ئِكَةُ بَعْدَ ذٰلِكَ ظَهِيْر-
অবশ্যই মহান আল্লাহ তাঁর [প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা] ‘মাওলাহযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালামও তাঁরমাওলাএবং নেককার ঈমানদারগণও তাঁরমাওলাএছাড়া ফিরিশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী। হাদিস শরীফেও রয়েছে,রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু এর ফযিলত বর্ণানা করতে গিয়ে ইরশাদ করেছেন,আমি যারমাওলাআলীও তারমাওলা মাওলানাবামওলানাশব্দটি আরবি। এটিমাওলানাদুটি শব্দে ঘটিত।নাএকটি সর্বনাম। এর অর্থ আমরা বা আমাদের। আরমাওলাশব্দের প্রায় ৩০টি অর্থ আছে। যেমনপ্রভু, বন্ধু, সাহায্যকারী, মনিব, দাস, চাচাতো ভাই, প্রতিনিধি, অভিভাবক, নিকটবর্তী, আত্মীয়, নেতা, গুরু, প্রতিপালক, সর্দার, প্রেমিক, প্রতিবেশী, আনুগত্য, প্রার্থনা, নীরবতা, ইবাদত,দণ্ডায়মান ইত্যাদি
হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর একটা উক্তি দিয়ে লেখাটি শেষ করছিখোলাফায়ে রাশেদিনে হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর যুগ চলছেএকদিন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইমাম হোসাইন ইবনে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর মধ্যে কোনো এক ইস্যু নিয়ে শিশুসুলভ তর্ক হয়েছে তর্কের এক পর্যায়ে ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বললেনতুমি হচ্ছ আঁমার নানাজানের গোলামের বাচ্চা
এতে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাগান্বিত হলেন এবং স্বীয় পিতা আমীরুল মোমিনীন হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাষ্ট্রীয় বিচারের আয়োজন করলেন। সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম সবাই উপস্থিত।রাষ্ট্রীয় প্রধানের ছেলেকে এত বড় কথা বলে ফেললেন হযরত
ইমাম হুছাইন (রাঃ)! এটা বিনা বিচারে ছাড়া যায়না। তাই তাঁর বিচার হতে হবে,কিন্তু এতে সবাই হতবম্ভ। ইমাম হুসাইন (রা:) বিচারের সম্মুখীন! এই বিচারে সবাই অবাক
নয়নে থাকিয়ে রইলেন,কিযে হয় সেই অপেক্ষায়। হযরত ইমাম হুছাইন (রাঃ) বিচার- আদালতে হাজির।
বিচারপতি স্বয়ং ওমর ফারুক (রাঃ)
হযরত ওমর ফারুক (রা:),হয়রত ইমাম হুসাইন (রা:) কে জিজ্ঞেস
করলেন,আঁপনি কি আমার ছেলে কে গোলামের বাচ্ছা গোলাম বলেছেন।দৃঢ় কণ্ঠে বললেন ইমাম,হ্যাঁ আমি বলেছি, “হযরত ওমর ফারুক (রা:) জিজ্ঞেস করলেন,আঁপনি এই কথা কেন বলেছেন,তখন হযরত ইমাম হুসাইন (রা:) বললেন,আমি ভুল কি বললাম,আঁপনিতো,আঁমার নানাজানের গোলাম,তাই আপনার
ছেলে,গোলামের বাচ্ছা গোলাম।
এই উত্তর শুনে হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) বললেন,আঁপনি কি এইটা লিখে দিতে পারবেন? হযরত ইমাম হুসাইন (রা:) বললেন, হাঁ পারবো।
হযরত ওমর ফারুক (রাঃ)
লিখা নিয়ে উপস্থিত সকলকে স্বাক্ষী রেখে বললেন,আপনারা সবাই স্বাক্ষী থাকুন রাসূলের নাতী, জান্নাতের
যুবকগনের সর্দার আমাকেরাসূলের গোলামবলেছেন।সুতরাং এটাই আমার নাজাতের উছিলা। অতএব
আপনারা আমার ইন্তিকালের পর কাফনের ভেতর লেখাটি দিয়ে দেবেন। এটাই আমার আরজী
[আল কউলুল বদী -৮৬৫ ]



Comments

  1. সুন্দর পোস্ট। জাযাকাল্লাহ খাইরান।
    কোরান সুন্নাহভিত্তিক আরো অনেক বিষয় জানতে আমার প্রিয় ওয়েবসাইট IslamicThinkingBD.blogspot.com

    ReplyDelete

Post a Comment