বিভিন্ন প্রকার দরুদ শরীফ উচ্চারণ ও অর্থ সহ

                                       বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। কোরআনে এসেছেঅবশ্যই আল্লাহ তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরুদ প্রেরণ করেন। হে মুমিনরা! তোমরাও তাঁর প্রতি যথাযথ দরুদ  সালাম পেশ করো’ (সূরা : আহজাব, আয়াত : ৫৬)

  • জীবনে একবার দরুদ-সালাম পাঠ করা ফরজে আইন।

  • দরুদ-সালাম অত্যন্ত আন্তরিকতা ভালোবাসার সঙ্গে খুব ধীরস্থিরভাবে চুপি চুপি পড়া উচিত।
  • দরুদ শরীফ পড়ার সময় অধিক নড়াচড়া, মাথা দুলানো, চিৎকার বা উঁচু আওয়াজ করা যাবে না।
  • একই বৈঠকে একাধিকবার নবী (সা.)-এর নাম উচ্চারিত হলে প্রথমবার সবার জন্য দরুদ পাঠ করা আবশ্যক (ওয়াজিব)
  • নবীজি (সা.)-এর নাম এক বৈঠকে বারবার লিখলে প্রথমবার দরুদ লিখা আবশ্যক (ওয়াজিব)


অজু ছাড়া যে দুরূদ পড়া যাবে না এমন নয়। যে কোনো অবস্থায় দরুদ শরীফ পাঠ করা যাবে। বিশেষ করে অজু অবস্থায় এবং আদবের সঙ্গে দরুদ পড়া উত্তম।

দরুদে ইব্রাহিম শুধু নই ছোট বড় অশংখ্য দরুদ শরীফ রয়েছে নিম্নে কিছু দরুদ শরীফ উল্লেখ করা হল।

 

দূরূদ শরীফ আরবিঃ
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ. وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ' اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ. اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ. وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ. اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ.

দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ

দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মদিউ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মদিম, কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা, ওয়া আলা আলি ইবরাহিমা, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।

 

অর্থসহ ছোট দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ

ছোট দরুদ শরীফ সলাতে পড়া যাবে না। সালাত ব্যতীত অন্য কাজে সংক্ষিপ্ত দরুদ হিসেবে এগুলো পড়া যাবে

সাহাবী উকবা ইবনু আমির (রা) বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু লাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে এসে বসল এবং বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনাকে কিভাবে সালাম জানাব তা আমরা জানি। কিন্তু আমরা আপনার উপর কিভাবে সালাত তথা দরূদ পাঠ করব? আমাদেরকে তা বলে দিন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু লাইহি ওয়া সাল্লাম (কিছুক্ষণ) চুপ থাকলেন, এমনকি আমরা ভাবলাম যদি প্রশ্নকারী প্রশ্ন না করতো, তাহলে অনেক ভাল হত! তারপর নবী (সাঃ) বললেন, তোমরা আমার উপর সালাত (দুরুদ) পাঠ করার জন্য বলোঃ

اللهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَبىّ الأُمِيِّ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সল্লি লা মুহাম্মাদিনিন-নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া লা আলি মুহাম্মাদিন কামা সল্লাইতা লা ইবরাহীমা ওয়া লা আলি ইবরাহীম, ইন্নাকা হামীদুম-মাজীদ।

 

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি নিরক্ষর নবী মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে রহমত প্রেরণ কর, যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীম তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত। (ইসমাঈল কাযীঃ হাদীস নং ৫৯)

 ছোট দুরুদ সম্পর্কে যায়েদ ইবনু খারিজাহ (রা) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু লাইহি ওয়া সাল্লামকে (দুয়া দুরুদের ব্যাপারে) প্রশ্ন করলাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা আমার উপর সালাত (দরূদ) পড় এবং অনেক বেশী দুয়া করার জন্য চেষ্টা কর। (আমার জন্য দুরুদ পড়ার জন্য তোমরা) এইভাবে বলোঃ

ছোট দরুদ শরীফ আরবি

الَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সল্লি লা মুহাম্মাদিওঁ-ওয়া লা আলি মুহাম্মাদ।

 

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর রহমত বর্ষণ কর।
(
সুনানে নাসায়ীঃ হাদীস নং-১২২৫)

 

اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلَى نَبَيِّنَا مُحَمَّدٍ

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম লা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ।

 

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর সালাত সালাম বর্ষণ করুন।

সবচাইতে ছোট যেই দুরুদ হলো

صلى الله عليه وسلم

বাংলা উচ্চারণঃ সল্লাল্লাহু লাইহি ওয়া সাল্লাম।

বাংলা অর্থঃ আল্লাহ তাঁর (মুহাম্মদ সাঃ) প্রতি সালাত (দয়া) সালাম (শান্তি) বর্ষণ করুন।

 

                          দুরূদ শরীফের ফজিলত

 

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোন জাতির জন্য আবির্ভূত হন নি, তিনি সারা বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ। সম্পর্কে সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে

আর আমি তো আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।

এতে বুঝা যাচ্ছে যে নবী (সাঃ) আমাদের জন্য রহমত। নিম্নে দুরূদ শরীফ পাঠের ফজিলত নিয়ে আলোচনা করা হলো

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমার সঙ্গী হওয়ার সবচেয়ে অধিক উপযুক্ত সেই ব্যক্তি,যে আমার প্রতি সবচেয়ে বেশি দরূদ শরীফ পাঠ করে। (তিরমিজী শরিফ) 

 

নবী (সাঃ)আরও ইরশাদ করেন –  ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটে থাকবে, যে আমার উপর বেশি বেশি দুরূদ শরীফ পাঠ করে। (তিরমিজী শরিফ) 

 

তিনি মহানবী (সাঃ) আরও বলেন, “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি গুনাহ মাফ করবেন এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। (মুসতাদরাকে হাকেম হাদীস নং-২০৫৬)

 

Comments